স্মৃতির পাতা থেকে
Mar 11, 2020   /   hmpcs.org
Gulam Mustafa

লেখক: মাঃ গোলাম মুসতাফা / ০০০০ ব্যাচ
অধ্যক্ষ, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ। 
প্রথম প্রকাশ: ১৯৯৫ শতবর্ষের স্মরণীকা। 


স্মৃতিপটে আজ অনেক কিছুই লীন, কিন্তু ভাস্বর হয়ে আছে সেই প্রাণপ্রিয় বিদ্যাপীঠ হরিমোহন ইনস্টিটিউশন যেখানে প্রায় আটত্রিশ বছর আগে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হই। তিন চার মাইল দুরের গ্রাম থেকে আমবাগানের মাঝ দিয়ে, খড়ের বন পেরিয়ে, মেঠো পথ ধরে শব ব্যবচ্ছেদ ঘরের পাশ দিয়ে স্কুল যেতে হত, আর বেলা শেষে ঐ একই পথ বেয়ে পাড়ার সাথীদের সাথে ফিরতে হত। এ ভাবে চারটে বছর কেটে গেছে। তখনও চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাজশাহী মহাসড়ক তৈরী হয়নি, রিক্সা চলেনি।

মনে পড়ে শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদের কথা প্রয়াত নাইমুল হক, আমিনুল হক, লুৎফর রহমান, গিয়াস উদ্দীন, আফতাব উদ্দীন ও কাজী স্যারের কথা। প্রত্যেক স্যারই ছিলেন এক একটা আদর্শ, পরম শ্রদ্ধার পাত্র। বেয়াদবী কাকে বলে জানতাম না। স্যারদের ভয়ে কোনদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম না, দূর থেকে কোন স্যারকে দেখতে পেলেই ক্লাশে ঢুকে পড়তাম। আর ক্লাশে স্যার থাকাকালীন তো কোন প্রশ্নই উঠে না একেবারে পিন পতন নীরবতা। স্কুলের বাইরে কোথাও কোন স্যারকে দেখতে পেলে ভয়ে দূর থেকেই কেটে পড়তাম। হঠাৎ সামনে পড়লে পড়ি কি মনি সালাম জানিয়ে কোন রকমে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি

প্রধান শিক্ষক মরহুম নাইমুল হক একজন নির্ভীক, দক্ষ প্রশাসক ছিলেন। তিনি লাঠি হাতে ক্লাশে আসতেন; আমরা তাঁকে খুব ভয় করতাম। দশম শ্রেণীর টেষ্ট পরীক্ষায় কেউ ফেল করলে তাকে ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে দিতেন না। পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করার দিন দেখতাম গরুর গাড়ীতে স্কুল আসতেন, সাথে থাকত একটা বন্দুক। তিনি গর্বের সাথে বলতেন আমি যাকে ফরম পূরনের অনুমতি দিই, সে পরীক্ষায় ফেল করেনা। এবং তাই হতো।

মনে পড়ে কাজী স্যারের কথা। আরবী না পারার জন্য তাঁর বেত মুহুর্মুহু ইস্পাতের ন্যায় ঝলসিয়ে উঠত। তাঁর এই বেতের জন্যই আরবী কাঁচা ছেলেরা ম্যাট্রিকে ফেল করেনি।

শরীর চর্চা শিক্ষকের কথা ভুলবার নয়। খেলাধুলার পিরিয়ড আসলে লাঠি হাতে তিনি বাঁশি বাজাতেন আর আমরা ঝটপট মাঠে নেমে সারিবদ্ধ হয়ে বাঁশির সুরে সুরে পিটি করতাম। বাঁশির সুরের সাথে তাল মেলাতে সামান্যতম ব্যত্যয় ঘটালে স্যারের হাতের লাঠি সাথে সাথে গর্জিয়ে উঠত।

সহপাঠীদের অনেকের সাথেই যোগাযোগ নেই। ওবায়দুরের সাথে মাঝে মধ্যে দেখা হয়। বর্তমানে সে একজন উচ্চপদস্থ প্রকৌশলী। ক’বছর আগে দিনাজপুরে তোতাকে ফুড ইন্সপেকটর হিসেবে দেখেছিলাম। আনসার, তেঁতুল ও মোস্তাফাকে দেখেছি অধ্যাপনায়। শ্রদ্ধাম্পদ স্যারেরা নেই, সহপাঠীরা কে কোথায়! কিন্তু কেমন যেন একটি আত্মীক যোগাযোগ হর হামেশাই অনুভূত হয় সেই প্রানের স্কুলের সাথে, সেই হরিমোহন ইনস্টিটিউশন। মাঝে মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ গেলে পেছনের দিকে দৃষ্টি ফেলে স্কুলটার চারপাশ একবার ঘুরে ঘুরে বেড়িয়ে নিই।